ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রিমালের তিনদিন পরও ঘরে ফিরতে পারেনি মানুষ

রিমালের তিনদিন পরও ঘরে ফিরতে পারেনি মানুষ

রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে কাউখালীর গ্রাম ও শহর । শত কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ী ,কৃষক ও সাধারণ মানুষ। রিমালের তিন দিন পরেও মানুষ ঘরে ফিরতে পারেনি।

উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের কাউখালীতে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ ঘূর্ণিঝড়েরর শুরু থেকে টানা দুই দিন ঘুমহীন রাত ‌ কাটিয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানে। এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর ১০ নাম্বার মহা বিপদ সংকেত জারি করার পর গত রোববার বিকেল থেকে একটানা ২০ ঘণ্টা রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে চলে।

ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। ফলে এর প্রভাবে কাউখালী উপজেলায় ঝড়ো ও ধমকা হাওয়া বয়ে যায়। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এতে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। ফলে উকূলীয় এলাকায় অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে, গ্রামের পর গ্রাম পানিতে ডুবে যায়।

মানুষের ঘরবাড়ি চুলা ডুবে যাওয়ায় রান্না করার কোন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ না খেয়ে কষ্ট পেয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন ৩০ টি স্থানে খিচুড়ি রান্না করে আটকে পড়া মানুষের ভিতর বিতরণ করেছে।

রবি, সোম ও মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদে ধারাবাহিকভাবে নোঙ্গরখানা খুলে রান্না করে অভুক্ত মানুষের মাঝে খিচুড়ি বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এখন মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে।

ভারি বর্ষণ ও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০থেকে ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িতে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল বসতবাড়ির ইলেকট্রনিক্স আসবার পত্র।ফসলের ক্ষেত, উপড়ে গেছে বহু গাছ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে চার দিন । এখন পর্যন্ত উপজেলার লক্ষাদিক মানুষ বিদ্যুৎ বঞ্চিত।

এই বন্যায় শত বছর এর চেয়ে বেশি পানি হওয়ায় উপজেলার সকল গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলায় প্রায় পাচ শতাধিক কাঁচা/পাকাবাড়ি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে । উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। কাউখালীর শহর থেকে গ্রামে শতকরা ৯০ ভাগ বাড়ির নিচতলা পানির নিচে ডুবে গেছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ইনচার্জ মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের লাইনে প্রায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কবে বিদ্যুৎ সবখানে চালু হবে তার নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তারা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সহ বিভিন্নভাবে মানুষের পাসে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গভীর নলকূপ বিভিন্ন জায়গায় পানির নিচে ডুবে যাওয়ায়।বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ও বৃষ্টির কারণে বহু জায়গায় গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন রাস্তার উপড়ে পরে থাকা গাছগুলো অপসারণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করছে ।

ব্যব্যবসায়ীদের দোকানে পানি ঢুকে কোটি কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, এলাকার মৎস্য খামারের অন্তত ৪০টি মাছের ঘের, ২৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমা দাস বলেন, ইরি ধানের ফসল প্রায় ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫ টি আশ্রয়ন কেন্দ্র সহ বহুতল ভবনে ১০-১৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে দেখা যায়। জোয়ারের পানি বাড়ে পাকা কাঁচা অনেক রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে ।

কাউখালী ইউএনও সজল মোল্লা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা ঘর, ব্যবসায়ীদের রবিশস্য, সড়ক, বিদ্যুৎ ও বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরো জানান এবারের বন্যার ক্ষতি এখনো সম্পূর্ণ নির্ণয় করা যায় নাই তবে ক্ষতির পরিমাণ আমাদের ভাবনার চেয়েও অনেক বেশি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সরকার ত্রাণ ও খাদ্য সাহায্য অব্যাহত রেখেছে।

রিমাল,ঘর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত